প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : দিনে দুপুরে শহর বর্ধমানের একটি গোল্ড লোন সংস্থার অফিসে ঢুকে গিয়ে ৩০. ৫ কেজি সোনা লুঠ করে নিয়ে পালালো সশস্ত্র দুষ্কৃতি দল । সোনা লুঠ করে পালানোর সময় দুষ্কৃতিদের সামনে পড়ে যান হীরামণ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি । দুস্কৃতিরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে
বাইকে চেপে চম্পট দেয় । বর্ধমান থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে জনবহুল বিসি রোড এলাকায় ঘটেছে এই দুষ্কৃতি তাণ্ডবের ঘটনা। যা নিয়ে রীতিমত আতঙ্কিত ছড়িয়েছে শহর বর্ধমানের ব্যবসায়ী ও সাধারণ নাগরিকরা।
গুলি চালানো ও গোল্ড লোন সংস্থা থেকে দুস্কৃতিদের সোনা লুঠ করে নিয়ে পালানোর খবর জানার পরেই নড়ে চড়ে বসেছে জেলা পুলিশের কর্তারা । জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় ছাড়াও বর্ধমান থানার আইসি পিন্টু সাহা সহ অন্য পুলিশ কর্তারা ঘটনাস্থলে পৌছান ।তারা দুস্কৃতিদের ছোড়া গুলিতে জখম হীরামণ মণ্ডলকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠান ।দুস্কৃতিদের খোঁজে জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে পুলিশি তৎপরতা । জেলার বর্ধমান আরামবাগ রোড সহ অন্য সড়ক পথে
নাকা চেকিংয়ে নেমে পড়ে পুলিশ কর্মীরা ।
ছবি : ঘটনার পরেই তদন্তে পুলিশ সুপার ভাষ্কর মুখোপাধ্যায় । রয়েছেন ডিএসপি ( হেড কোয়ার্টার ) সৌভিক পাত্র , আইসি পিন্টু সাহা ।
বর্ধমান শহরের বিসি রোডে রয়েছে একটি গোল্ড লোনের সংস্থার অফিস । ওই সংস্থার কর্মী পলাশ মণ্ডল জানিয়েছেন , এদিন দুপুরে ৬ জনের সশস্ত্র দুস্কৃতি দল তাদের ওই সংস্থার অফিসে ঢুকে পড়ে । দুস্কৃতিদের প্রত্যেকের হাতেই রিভালবার ছিল । পলাশ বাবু বলেন, দুস্কৃতিরা প্রথমেই আগ্নেআস্ত্র দেখিয়ে সংস্থার কর্মীদের প্রাণে মেরে দেবার হুমকি দেয় ।পরে তারা মারধোর করে সংস্থার কর্মীদের অফিরের এক জায়গায় নিলডাউন করিয়ে রেখে অবাধে লুঠপাট চালায় । পলাশ মণ্ডল জানিয়েছেন , দুস্কৃতিরা তাদের সংস্থার অফিস থেকে ৩০. ৫ কেজি সোনা লুঠ করে নিয়ে পালিয়েছে ।
গোল্ড লোন সংস্থার কর্মীদের কথায় জানা গিয়েছে, দুস্কৃতির ছোঁড়া গুলিতে জখম হীরামন মণ্ডল আগে তাদের অফিসে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করতো । তার আদি বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর থানার জৌগ্রামে ।বর্তমানে তিনি থাকেন বর্ধমানের সরাইটিকর এলাকায় । সিকিউরিটি গার্ডের কাজ ছেড়ে দিয়ে হীরামন মণ্ডল এখন বর্ধমানে টোটো চালান ।
হীরামন মণ্ডল জানিয়েছেন , এদিন দুপুরে তিনি বিসি রোডে লোন সংস্থার অফিসে পরিচিতদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন । অফিসে ঢোকার সময়ে তিনি আগ্নেআস্ত্র সহ দুই দুস্কৃতিকে দেখতে পেয়ে যান । তার জন্যই ঘটেযায় বিপত্তি । হীরামন জানান ,দুস্কৃতির মুখে বড় মাস্ক লাগানো ছিল । সেই কারণে তাদের মুখ ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছিল না । দুস্কৃতিদের একজন তাঁকে সংস্থার অফিস থেকে ঠেলে বার করে রাস্তায় নিয়ে যাবার সময়ে গুলি চালায় । সেই গুলি লক্ষভ্রষ্ট হওয়ায় তিনি রক্ষা পান । হীরামন বলেন এরপর দুস্কৃতিদের সঙ্গে তার ধস্তাধস্তি শুরু হয় ।তখন এক দুস্কৃতি সম্ভবত রিভালবারের বাট দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে ।এরপরেই দুস্কৃতি দলের অপর একজন গুলি চালায়। সেই গুলি তাঁর পিঠে লাগে।বর্ধমান থানার পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করছে বলে হীরামন জানিয়েছেন । প্রত্যক্ষদর্শী সজল রায় জানিয়েছেন , দুস্কৃতিরা বাইক নিয়ে এসেছিল।তারা হীরামন মণ্ডলকে গুলি চালানোর পাশাপাশি ফাঁকায় এক রাউন্ড গুলি চালিয়ে বাইক নিয়ে পালিয়ে যায়।
জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন , ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। দুস্কৃতিদের খোঁজে জেলার প্রতিটি রাস্তায় নাকা তল্লাশি করা হচ্ছে। জেলার প্রতিটি থানার আইসি বা ওসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে দুস্কৃতিরা পালিয়ে যেতে না পারে।পুলিশ সুপার গোল্ডলোন সংস্থার অফিসেও তদন্তে যান।
ছবি : প্রতীকী